Thursday, September 4, 2014

প্রবাসের প্রথম ঈদ


দেশে সাধারণত ঈদের আগে যে আমেজ দেখা যায় এখানে তার বিন্দুমাত্রও ছিল না । তাই ঈদ হচ্ছে এটা মনেই হচ্ছিলো না । সেইজন্য ঈদ উপলক্ষে কিছু করার কোন সাড়াও পাচ্ছিলাম না ভিতর থেকে । কিন্তু আমাদের আরও তিন বাংলাদেশি পরিবার আগে থেকেই এখানে থাকেন বলে তারা এর মাঝেই প্রস্তুতি নিতে অভ্যস্ত হয়ে গিয়েছিলেন । আর তাই সেই ভাবীদের সাথে একসাথে কিছু আয়োজন দিয়ে ঈদের আমেজ আনার চেষ্টা ছিল । ঈদ মানেই নামাজ পড়া , খাওয়া , মাংস কাটাকাটি , ঘুরে বেড়ানো । যেহেতু এখানে কোরবানি দেওয়া ঝামেলা, তাই আমাদের কোরবানি দেশেই দেওয়া হয়েছে । তাই ঈদুল আযহার আসল আমেজ টাই ছিল না । এখানে ভাবীরাও নাকি ঈদের নামাজ পড়তে যায় । তাই ঠিক করলাম বাসায় মন খারাপ করে বসে না থেকে আমিও বরের সাথে নামাজ পড়তে যাবোএখানে ঈদ ছিল ২৬ অক্টোবর । আমাদের এখানে ঈদের দিন তাপমাত্রা খুব কম ছিল সারাদিন । আমরা ৭ঃ৩০ টার দিকে বাসা থেকে বের হয়েছি । তখনো সুরজ উঠেনি ।বাহিরে তাপমাত্রা ছিল ১ ডিগ্রি সে । মেয়েকে কাপড় দিয়ে প্যাকেট করে বের হলাম নামাজের উদ্দেশ্যে । এখানে প্রচুর টার্কিশ রা থাকে । আমাদের বাসার থেকে কাছে টার্কিশ মসজিদ । কিন্তু আমরা এরাবিয়ান মসজিদে নামাজ পড়তে গেলাম । দেখলাম পুরুষ মহিলা সুসজ্জিত হয়ে নামাজ পড়তে আসছে । অনেক পাকিস্তানিও ছিল । মেয়েদের জন্য যেখানে নামাজ পড়ার ব্যবস্থা করেছে সেখানে অন্য সব দেশের মুসল্মান মহিলাদের দেখে ভালো লাগছিলো । তারা সবাই খুব সুন্দর করে নিজেদের কাপড় দিয়ে ঢেকে নামাজের প্রস্তুতি নিলেন । কিন্তু আমার দুর্ভাগ্য , নামাজ শুরু হওয়ার আগে দিয়ে সাওদা এমন কান্নাকাটি শুরু করলো সেই কান্না থামল নামাজ শেষ হওয়ার পর । তাই নামাজ আর পড়া হোল না ।

নামাজ শেষে বের হয়ে দেখি বৃষ্টি হচ্ছে । সারাদিন বৃষ্টি ছিল । ঠাণ্ডা তো আছেই । আমরা চার পরিবার একসাথে সারাদিন কাটানোর উদ্দেশ্যে হুমায়ূন ( পলাশের কলিগ )ভাইয়ের বাসায় গেলাম । আমরা তিন ভাবী ভাগ করে রান্না করেছিলাম । আমার ভাগে পড়েছিলো গরুর মাংস রান্না আর ভুনা খিচুড়ি করা । আমি মাংস আগের দিন রান্না করে রেখেছিলাম । এবার সব পরিবারে কিছু ব্যক্তিগত ঝামেলা থাকায় খুব বেশি আয়োজন ছিল না । গরুর মাংস, মুরগী গ্রিল, ডিম , পোলাউ , খিচুড়ি, সেমাই, জর্দা , সালাদ, ড্রিঙ্কস ইত্যাদি ছিল । সারাদিন সবাই মিলে রান্না , খাওয়া , গল্প করে কেটে গিয়েছিলো । আমরা সেদিন ই বাসা বদলে হুমায়ূন ভাইদের বিল্ডিং এ চলে এসেছিলাম । তাই পলাশ কে বৃষ্টি , ঠাণ্ডার মধ্যে বেশ কয়বার এ বাসা ও বাসা করতে হয়েছিলো । আড্ডার ফাঁকে সন্ধ্যার দিকে আমি নতুন বাসা কিছুটা গোছালাম । রাতে সবাই একসাথে খেয়ে ১০ টার দিকে আমাদের মিলন মেলা ভাঙল । এত কিছুর মাঝেও বারা বার দেশের কথা খুব মনে পড়েছিলো । 

স্মরণীয় হয়েই থাকবে আমার জীবনের প্রথম প্রবাসের ঈদ ।আমার কাছে ঈদ মনে না হয়ে পিকনিক পিকনিক লাগছিলো । দেশে এমন ঈদ কখনোই হবে না । সবাই যার যার প্রিয়জনদের নিয়ে ঈদ করবো । হয়তো ঈদের পরে দেখা হবে ।তাও ছুটি শেষ হয়ে যখন সবাই বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে একসাথে হব তখন। অথচ এই দূর পরবাসে সবাই সেদিন এক পরিবার হয়ে গিয়েছিলাম । এটাই জীবন ।
২১ টি মন্তব্য
salahuddinsiteসালাহ্ আদ-দীন০১ নভেম্বর ২০১২, ০৬:২৪
লেট ঈদ মোবারক আপু!
আমার ঈদ ছিল আরও মজার!!
ঘুমিয়েছি ভোর ৫ টায় ঘুম থেকে উঠেছি সকাল ৭ টায়। নামাজ ছিল ৮:১৫ মিনিটে। নামাজ শেষ করে সারা দিন ঘুম! 
lnjesminলুৎফুন নাহার জেসমিন০১ নভেম্বর ২০১২, ১৬:৫০
সারাদিন ঘুমাইলেন কেউ জাগাইতে আসে নাই । শুনে ভালো লাগলো না । 
যাই হোক , অন্যরকম তো অবশ্যই । 
আপনি থাকেন কোথায় ? আমার ঠিক জানি না । 
ভালো থাকবেন ।
kamaluddinকামাল উদ্দিন০১ নভেম্বর ২০১২, ০৭:১৮
আনন্দ করার ইচ্ছে থাকলে সব জায়গায়ই করা যায়, তবে দেশে থাকলে যেটা সহজ হতো ওখানে হয়তো একটু কঠিন হল এই আর কি । ভালো লাগলো আপনার প্রবাস জীবনের ঈদ কাহিনী ।
saeedmbhaiসাঈদ মোহাম্মদ ভাই০১ নভেম্বর ২০১২, ০৮:২৬
কামাল ভাইয়ের সাথে সহমত।
lnjesminলুৎফুন নাহার জেসমিন০১ নভেম্বর ২০১২, ১৬:৫৬
তা অবশ্য ঠিক বলেছেন ,আনন্দ করতে জানতে হয় । তাহলে জায়গা কোন ফ্যাক্টর না । 
আপনি পড়লেন জেনে ভালো লাগলো । 
শুভেচ্ছা নিবেন ।
saeedmbhaiসাঈদ মোহাম্মদ ভাই০১ নভেম্বর ২০১২, ০৮:৩৩
আসলে ঈদের আমেজটা একেক দেশে একেক কালচারে একেক রকম। আমরা যারা বৈদেশে থাকি তাঁরা বুইড়া হইয়াই বৈদেশে আসি । তাই অন্য কালচারের অমেজটা অ্যাঁডোপ্ট করতে একটু সময় লাগবে। আমার বিশ্বাস আগামীতেই বৈদেশের ডিজিটাল ঈদ ভাল লাগতে শুরু করবে। আর না লাগলে এক ঘুমে দিন পাড়ি দিবেন  ঈদ পরবর্তী শুভেচ্ছা আর অনন্ত শুভকামনা রইল। 
lnjesminলুৎফুন নাহার জেসমিন০১ নভেম্বর ২০১২, ১৬:৫৯
সাইদ ভাই , আমি বেশিক্ষন ঘুমাতে পারি না । তাই অন্য কোন আনন্দ নাও করলে রাস্তায় রাস্তায় হেঁটে বেড়াবো । 
ভালো লাগলো আপনার উপস্থিতি । ভালো থাকবেন । শুভেচ্ছা রইলো ।
azimhossainআজিম হোসেন ’আকাশ’০১ নভেম্বর ২০১২, ০৯:৫৯
শুভেচ্ছা।
lnjesminলুৎফুন নাহার জেসমিন০২ নভেম্বর ২০১২, ২১:১৭
আপনার জন্য শুভেচ্ছা ।
neelsadhooনীলসাধু০১ নভেম্বর ২০১২, ১৫:৩৬
প্রবাসী জেসমিনের জন্য দেশি ঈদ মোবারক রইলো। 


ভালো থাকুন। সুন্দর থাকুন।
lnjesminলুৎফুন নাহার জেসমিন০২ নভেম্বর ২০১২, ২১:১৫
ধন্যবাদ নীল ভাই । 
ভালো থাকুন সবসময় ।
fardoushaফেরদৌসা০১ নভেম্বর ২০১২, ১৬:৫৫
আপনার ঈদ আসলেই পিকনিকের মতই হল। 

আমরা অবশ্য সব কিছুই দেশের মত করেছি, শুধু প্রিয়জনরা সাথে ছিল না 

আস্তে আস্তে সব ঠিক হয়ে যাবে ।
lnjesminলুৎফুন নাহার জেসমিন০২ নভেম্বর ২০১২, ২১:১৬
তাই আশা করি । সব মানিয়ে নিব । হয়তো যাওয়ার সময় এই দেশের জন্যই মায়া লাগবে । 
ভালো থাকবেন ।
chomok001মোঃ হাসান জাহিদ০১ নভেম্বর ২০১২, ১৯:৫০
আমাদের ঈদ গুলো এই রকমই হয় । অনেক কিছু থেকেও যেন কিছু নেই । যাই হোক, এটাই জীবন । ভালো থাকবেন সবসময় । 
lnjesminলুৎফুন নাহার জেসমিন০২ নভেম্বর ২০১২, ২০:৫১
হুম, আমিও এবার বেশ বুঝতে পারলাম । 
ভালো থাকবেন সবসময় ।
bonofolএইচ এম শরীফ উল্লাহ০৩ নভেম্বর ২০১২, ০৩:১২
এই দূর পরবাসে সবাই সেদিন এক পরিবার হয়ে গিয়েছিলাম 

নিজ দেশের লোকজনদেরই প্রবাসে এক পরিবার মনে হয়।
আপনজনদের ছেড়ে জীবনের প্রথম ঈদ প্রবাসে করলেন। যদিও দেশীয় আনন্দের ফিলিংস থেকে বঞ্চিত হয়ছেন, তবুও এটা একটা অন্যরকম অভিজ্ঞতা অর্জিত হলো। কোথায় থাকেন তা কিন্তু বলেন নি। 

শুভকামনা।
lnjesminলুৎফুন নাহার জেসমিন০৩ নভেম্বর ২০১২, ১৯:৫৩
আসলে এর আগে কোথায় থাকি তা জানিয়েছি বলেই উল্লেখ করা হয়নি কোথায় থাকি ? জার্মানের গিসেনে থাকি । 

ভালো লাগলো আপনার উপস্থিতি । ভালো থাকবেন । শুভকামনা রইলো ।
drsaniডা: আহমাদ যায়নুদ্দিন সানী২৪ নভেম্বর ২০১২, ২১:৩৭
পড়লাম। সুন্দর।
lnjesminলুৎফুন নাহার জেসমিন২৪ নভেম্বর ২০১২, ২২:৫৪
ধন্যবাদ , পড়ার জন্য । 
শুভকামনা ।
doctor2009অমি চৌধুরী২৬ নভেম্বর ২০১২, ১৪:১০
পড়াশোনার জন্য বাইরে যাওয়ার ইচ্ছে আছে। প্রবাসী বাঙালিদের মধ্যে ঐক্য খুব প্রয়োজন। আশার কথা আগের চেয়ে এখন অনেক বেশি বাংলাদেশি প্রবাসে আছে তাই একাকীত্ব কিছুটা হলেও লাঘব হয়।

ভালো লাগলো লেখা পড়ে 
lnjesminলুৎফুন নাহার জেসমিন২৬ নভেম্বর ২০১২, ১৮:২৭
আমাদের এখানে সবাই একে অপরের সুখে দুঃখে এক সাথে থাকার চেষ্টা করি । 
ধন্যবাদ পোস্ট টি পড়ার জন্য ।

No comments:

Post a Comment